আপনি হয়তো ভাবছেন ৪০ বছরের পর খাবার কন্ট্রোল করবেন। এর আগ পর্যন্ত আল্লাহর দুনিয়াতে যা আছে সব গোগ্রাসে খাবেন।
যদি তাই ভেবে থাকেন তবে আপনি বোকার স্বর্গে ঝাড়ু দিচ্ছেন।
মানুষের জীবনচক্রকে মোট চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-শিশুকাল, কৈশোর, যৌবন ও বৃদ্ধ বয়স।
জীবনের এই চারটি স্তরে খাবারের চাহিদা এক রকম নয়। যদি সঠিক বয়সে সঠিক পরিমাণে সুষম খাবার ও নিয়মমাফিক চলা হয়, তাহলে রোগ প্রতিরোধ করা খুবই সহজ।
যেহেতু এই গ্রুপে বেশিরভাগ মানুষের বয়স ২০ বা তার উপরে তাই আজ তাদের জীবনযাত্রা কেমন হওয়া উচিৎ তা নিয়ে কিছু লিখব।
আপনার বয়স যত বাড়বে, ক্যালরির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে। ২০ বছর পর থেকে সহজ শর্করা অর্থাৎ চিনি-গুড় কমিয়ে ফেলা অথবা একেবারে বাদ দেওয়া ভালো। জটিল শর্করা যেমন-ভুসিযুক্ত আটার রুটি, লাল চাল, ডাল ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া ভালো। এতে ওজন বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচা যাবে।
প্রতিদিনের খাবারে ভাতের পরিমাণ কমিয়ে এনে সবুজ শাক-সবজী ও আমিষযুক্ত খাবার বেশি রাখতে হবে।
আমিষের অভাব পুরণের দুই-তিন ধরণের ডালও খেতে পারেন। তবে অবশ্যই বাহিরের খোলা আর তেলযুক্ত খাবার একেবারেই খাবেন না। সেগুলো খাবার না সব ক্যামিক্যাল। সিগারেট ও অনান্য সাময়ীক সুখ দানকারী নেশা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকতে জিমে যাওয়া বা ভোরে দৌড়ানোর সাথে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি কিংবা ঘরের মাঝেই ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে হবে। এতে আমরা যা খাই তার সাথে শরীরের একটি সামঞ্জস্যতা আসবে। শুধু খেয়েই গেলাম কিন্তু কোন কাজ করলাম না এই মন্ত্রে মুগ্ধ থাকলে শরীরে অতিরিক্ত চিনি ও চর্বী জমে যাবে। যা পরবর্তীতে আপনার জন্য যম রূপে বিভিন্ন রোগ নিয়ে আগমন ঘটাবে।
মানুষ সারাক্ষণ দেহের সুস্থতা নিয়ে ভাবে কিন্তু আমাদের নিজেদের মনের উপরেও বিশেষ খেয়াল দেয়া দরকার।
সুস্থ দেহের সাথে সুস্থ মনও দরকার। স্বাস্থ্য ও মন একে অন্যের সাথে জড়িত। পরিবার ও আপনজনদের সাথে বেশি বেশি সময় কাটান এবং যতটুকু সম্ভব সর্বদা হাসি খুশি থাকার চেস্টা করুণ। মানুষের সুস্থ চিন্তাও সুস্থ মন গঠনের সাহায্য করে।
এবার এই দেহ ও মনের সুরক্ষায় দরকার পর্যাপ্ত ঘুম। ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। হ্যা, পর্যাপ্ত ঘুমের কথাই বলছি। একজন পরিণত বয়সের মানুষের রাতে গড়ে দৈনিক ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম দরকার।
এখন আপনার প্রশ্ন হতে পারে আরে ভাই আমার বয়সতো কেবল ২০ কিংবা ২৫ এখনি এত কিছু মানতে হবে কেন!!??
ভাই আমি রোগ হবার আগেই তা প্রতিরোধে বিশ্বাসী। কেন আমি ৪০ বছর পর্যন্ত গরুর মত খাব আর ৪০ এর পরে গরু যা খায় তা খাব?!!
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে ৪০ বছর হতে হতেই বিভিন্ন রোগ দেহে বাসা বাঁধতে শুরু করে।
যেমনঃ
উচ্চ রক্তচাপ,
রক্তে অধিক চর্বী
ডায়াবেটিস
হার্টের বিভিন্ন রোগ
অস্টিও আর্থাইটিস
ফ্যাটি লিভার
ক্যান্সার সহ আরো অনেক রোগ।
পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই। নিজেকে ভালোবাসুন। বুড়ো বয়সে নিজেকে কল্পনা করুণ।নিজের মৃত্যুর কথা ভাবুন। আগে আপনি সচেতন হোন তারপর আপনার আসে পাশে সবাইকেই সচেতন করুণ।
কেউ দ্রুত মরতে চায়না। আমি সব সময় দোয়া করি মানুষের যেন শুধুমাত্র বার্ধক্যজনিত করণে মৃত্যু হয়, মানুষের যেন কোন রোগ কিংবা দুর্ঘটনায় প্রাণহাণী না ঘটে।
-ডা. মির্জা শামীম
No comments:
Post a Comment