Header Ads

Header ADS

ক্যাসিনো বনাম ইন্ডোর গেমস-১ম পর্ব (বাজিগর)

শহরে মানুষ হয়েছি। নব্বইয়ের দশকে খেলাধুলো নিয়ে আমার মত শহরে বেড়ে ওঠা প্রায় সব শিশুরই অভিযোগ থাকত। কারণ সংকীর্ণ এই শহরে স্কুলেই ছিল একমাত্র অনুমিত খেলার মাঠ। খারাপ ছেলেদের সাথে যেন মিশতে না পারি তাই বাবা মা পাড়ার গলিতেও খেলতে দিত না। উপায় না পেয়ে ঘরেই খেলতাম চোর-পুলিশ, লুডু কিংবা ক্যারাম। দেশে কম্পিউটারের ছোঁয়া লাগার পর মাঠের খেলাকে ছোট করে জাদুর বক্সে ঢুকিয়ে শুরু হলো আমাদের ভার্চুয়াল গেমসের আসক্তি। যাদের কম্পিউটার ছিল না তার স্কুল ফাঁকি দিয়ে লিভার আর বাটনের উপর বাড়ি মেরে মেরে খেলত মোস্তফা গেমস। আর যদি কেউবা বাসায় ধরা পড়ত তবে তার উত্তমমধ্যমের কোন ঘাটতি থাকত না।
অবশ্য আরেকটু বড় হবার পর দেখলাম ইন্ডোর গেমস হিসেবে তাসই সবার কাছে বেশি জনকপ্রিয়। আর তখনকার মডার্ন বাচ্চারা খেলত মনোপোলি।
এরপর আরো বড় হলাম,  জুয়া নামের জিনিসটা ততদিনে খেলার মাঠের বাজি থেকে টিভির পর্দায় চলে গেল। আইপিএলের প্রতি ম্যাচে শুরু হলো বাজির প্রচলন।
আরো বড় হবার পর জীবন আমাকে চেনালো ক্যাসিনো নামের অদ্ভুত এক ইন্ডোর গেমস। অনেক মুভিতে বড় বড় ডন কিংবা মাফিয়াদের ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে দেখেছি। তবে পশ্চিমা কিংবা লাস ভেগাসের হাওয়া যে বাংলাদেশের মত একট গরীব দেশেও বইবে তা রিতিমত অবাক হবার মত কথা। সুদক্ষ নেপালী ক্যাসিনো কর্মী দিয়ে নাকি গোপনে চলে অবাধ জুয়া ব্যবসা।
তো যা হোক, লুডুর বোর্ড থেকে ডায়েসের বোর্ড.... সবই যেন তাসের ঘড়। মিনিটেই গুটি খাবে নয়ত টাকা হারাবে।
এই ক্যাসিনো শব্দটা ২০০০ বছর পুরনো হলেও পাশের দেশ ভারত ও নেপালের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মুখে মুখেও এই নাম।
আগে যেখানে বিপদগামী যুবকদের এনে বিভিন্ন স্পোর্টিং ক্লাবে যুক্ত করে গড়ে তোলা হত দেশ সেরা খেলোয়াড়। এখন সেই সব ক্লাবেই গড়ে উঠছে দেশ সেরা বাজিগর।
সময়টা এখন বাজিগরদের। সাধারণ থেকে শ্রীমন্ত কিংবা সন্ন্যাসী সবই সম্ভব ক্যাসিনোর বাজিগরদের হাতে। বাজির নেশা যেন মরণ নেশার চেয়েও জঘন্য। সেথায় মরে একজন কিন্তু ডায়েসের গুটির সাথে ঘুরপাক খায় পুরো একটি পরিবার।
ক্যাসিনো নামের এই ইন্ডোর গেমসটির মৃত্যুর শুরু একটি পরিবারে, তবে শেষ হয় একটি জাতির ঘুমন্ত নেক্রপলিসে।

-ডা. মির্জা শামীম

No comments

Theme images by cmisje. Powered by Blogger.