Header Ads

Header ADS

ক্যাসিনো বনাম ইন্ডোর গেমস-শেষ পর্ব (চেতনা ব্যবসায়ীর চুঙ্গি ফিট)

আমার আদর্শ জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উক্তি দিয়ে লিখাটি শুরু করতে চাই। তিনি বলেছিলেন, “ ব্ল্যাকমার্কেটিং কারা করে? যাদের পেটের মধ্যে দুই কলম বিদ্যা রয়েছে তারাই ব্ল্যাকমার্কেটিং করে। স্মাগলিং কারা করে? যারা বেশি লেখাপড়া করেছে তারাই করে। হাইজাকিং কারা করে? যারা বেশি লেখাপড়া শিখছে তারাই করে। ইন্টারন্যাশনাল স্মাগলিংও তারাই করে। বিদেশে টাকা রাখে তারাই। আমরা যারা শিক্ষিত, আমরা যারা বুদ্বিমান, ওষুধের মধ্যে ভেজাল দিয়ে বিষাক্ত করে মানুষকে খাওয়াই তারাই। নিশ্চয়ই গ্রামের লোক এসব পারে না, নিশ্চয়ই আমার কৃষক ভাইরা পারে না। নিশ্চয়ই আমার শ্রমিক ভাইরা পারে না। ”

বাংলাদেশে একেক সময় একেক ট্রেন্ড চলে। বর্তমানে বাংলাদেশে "ক্যাসিনো ট্রেন্ড" চলে। সবার মুখে মুখে এই নাম। যে কখনোও এই নাম শুনেনি সেও আজ ক্যাসিনোর আদ্যোপান্ত জানা শুরু করেছে। বাঙ্গালীর কৌতুহলী মন কোন কিছুকেই আটকে রাখতে পারে না।

ইটালি শব্দ ক্যাসিনো যাকে বাংলাদেশের মানুষ জুয়ার আসর নামে এতদিন চিনত সেই চিন্তাকে একটু রঙ ঢং ও চাকচিক্যময় করে ঘরের মাঝেই গড়ে তুলেছে কোটি টাকা হাত বদলের ইতালিয়ান জুয়া ঘর। সাথে নেশা ও অবাধ মেলামেশা তো থাকছেই। তাই এত ঘরটি একত্রিত করতে পেরেছে মাদক ব্যবসায়ী, ব্লাকমার্কেটার, স্মাগলার, হাইজ্যাকার, পতিতা সহ সকল ধরনের ছোট বড় অপরাধীদের।

বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্রিয়া চক্র যারা কিনা মাঠের খেলোয়াড় বানাতেন তারাই এখন ইন্ডোর গেমসকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। তাদের মতে খেলোয়াড়দের অবসরে ক্লান্তি দূর করার জন্য ক্যাসিনো অর্থাৎ ঘড়োয়া খেলার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে এবং বেশ কিছু বছর ধরেই চলে আসছে এর প্রচলন।

তবে এখানে প্রশ্ন হতে পারে এত দিন কেন সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদারকি করেন নি?
এর কারণ হলো রাজধানীর বেশ কিছু নামিদামী স্পোর্টিং ক্লাব ( যার মধ্যে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রও রয়েছে) তারা উচ্চ আদালত থেকে রিট এনে নিপুণ, চড়চড়ি, ডায়েস, ওয়ান টেন, ওয়ান এইট, থ্রি কার্ড, নাইন কার্ড, রেমি, ফ্লাস এগুলোকে বৈধ ঘড়োয়া খেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। এর প্রেক্ষিতেই পুলিশ চাইলেও সে সব ক্লাব গুলোতে তদারকি করতে পারত না।

এবার প্রশ্ন হতে পারে এসব ক্লাবগুলো কাদের নিয়ন্ত্রণে চলে?
এ পর্যায়ে শেখ মুজিবের আরেকটি উক্তি তুলে ধরলাম, "বাংলার উর্বর মাটিতে যেমন সোনা ফলে, ঠিক তেমনি পরগাছাও জন্মায়! একইভাবে বাংলাদেশে কতকগুলো রাজনৈতিক পরগাছা রয়েছে, যারা বাংলার মানুষের বর্তমান দু:খ দূর্দশার জন্য দায়ী।"
তিনি ঠিকিই বলেছিলেন। মুজিব রাজনীতি ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের চেতানাকে ভুল পথে কাজে লাগিয়ে ওনেকেই হয়ে উঠেছে ক্যাসিনো সম্রাট। আসলে এরা চেতনা ব্যবসায়ী। "মুক্তিযোদ্ধা" নামটি কেবল লেবাস হিসেবে কাজে লাগিয়ে আন্ডার কাভারে চালাচ্ছে এসব কাজ। আবার কোন কোন চেতনাধারী ক্যাসিনো সম্রাটদের অফিসে খেলার নিয়মে নাকি ভিন্নতা থাকে। সেখান থেকে কেউ কখনো জিতে আসতে পারে না। বিজেতা জুয়াড়ির সব টাকা জোরপূর্বক রেখে দেয়া হয়। জুয়া খেলায় একে নাকি বলে "চুঙ্গি ফিট"।
আবার অনেকে জুয়ার নেশায় সমস্ত সম্পত্তি বাজিতে হেরে হয়ে যায় সর্বস্বান্ত। সংসারের ঘটিবাটি বিক্রি করে একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যায় তারা। যাকে জুয়ার ভাষায় বলে "অল-ইন"। তাই ক্যাসিনো মালিকদের টাকার কোন হিসেব নেই এবং তাদের এই বিপুল পরিমাণ কোটির অংকের অর্থের সঠিক তথ্য পাওয়াই যেন দুষ্কর ও দুর্ভেদ্য।

প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা উড়ছে জুয়ার টেবিলে।  তবে কোথায় যাচ্ছে এসব টাকা? জুয়াড়ু সম্রাটদের কাছেই যদি এত টাকা থাকে তবে দেশের কোন প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে হলে কেন বিদেশীদের কাছে ভিক্ষা চাইতে হয়??
জাতির পিতা বলেছিলেন," ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে এনে দেশকে গড়া যাবে না। দেশের মধ্যেই পয়সা করতে হবে।"
জুয়াড়ুদের এই টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। অর্থ পাচার রোধ করে ২০-৩০ টা ক্যাসিনো সম্রাট ধরতে পারলেই দেশের উন্নয়ন মূলক বিভিন্ন কাজে সেগুলো ব্যয় করা যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাদের হাতে টাকা হস্তান্তর হবে তারা যেন আবার বৃত্তাকার চক্রের পুনরাবৃত্তি করতে না পারে। এজন্য জাতির পিতা বলেছেন, "অযোগ্য নেতৃত্ব, নীতিহীন নেতা ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সাথে কোনোদিন একসাথে হয়ে দেশের কাজে নামতে নেই। তাতে দেশসেবার চেয়ে দেশের ও জনগণের সর্বনাশই বেশি হয়।"

পরিশেষে একটি কথাই বলব। জানি এসব লিখালিখি করে কোন পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। ক্যাসিনো নিয়ে হাজারো আর্টিকেল লিখা হবে কিন্তু মানুষের হাইপ কমার সাথে সাথে লিখার বেগও কমে যাবে।
তো যাই হোক, কথায় আছে জোর যার মুল্লুক তার। তাই জোরাজুরির এই দুনিয়াতে ১৮৬৭ সালের বঙ্গীয় জুয়া আইনের সংশোধন এনে জুয়া ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন আইন প্রণয়ন করতে হবে। সেই সাথে সরকার দলীয় ও চেতনা বিক্রেতাদের জন্যেও রাখতে হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিশেষ ব্যবস্থা। তবেই ফিরে পাব জাতির পিতার সেই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।

-ডা. মির্জা শামীম

No comments

Theme images by cmisje. Powered by Blogger.